Menu |||

মৃত বাবার লাশ ঘরে রেখে তসলিমাকে যেতে হলো পরিক্ষার হলে

বাঁশখালীর গণ্ডামারা থেকে: ঘরে মা-বোনের কান্নার রোল, আত্মীয় স্বজনদের আহাজারি। আশপাশে প্রতিবেশীদের সান্তনা।  এ অবস্থায় পরীক্ষার হলে যাওয়ার প্রস্তুতি। এই অনুভূতি কেমন হতে পারে তা কেবল এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষার হলে যেতে প্রস্তুতি নেওয়া পরীক্ষার্থী ছাড়া আর কারও পক্ষে অনুধাবন করা অনম্ভব।

কিন্তু এ কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে, চোখে জল নিয়ে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে, কান্নার শব্দ পেছনে ফেলে, বাড়ির সামনে বাবার জন্য কবর খোঁড়ার মর্মান্তিক চিত্র দেখেই পরীক্ষার হলে যেতে হলো বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নের জাকির আহমদের মেয়ে তসলিমাকে।

সোমবার বাঁশখালীর গণ্ডমারায় এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে-বিপক্ষে দুই গ্রুপের উত্তেজনাকে ঘিরে পুলিশ-আনসার ও গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মারা যায় তসলিমার বাবা জাকির আহমেদ।

মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে থাকলেও মৃত্যুর সংবাদ সোমবার রাতেই পৌঁছেছে বাড়িতে। ফলে রাতে পড়তে বসা হয়নি।  সকালে পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগ মুহূর্ত

পর্যন্ত বাড়িতে বাবার মরদেহ না আসেনি।  বাবার মৃত্যুসংবাদ সঙ্গে নিয়েই পরীক্ষার হলে যেতে হলো তসলিমাকে।
পশ্চিম গণ্ডামারা রহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে এবছরের আলিম (এইচএসসি সমমান) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তসলিমা।  বিবাহিত দুই বোনের পরে পরিবারে তসলিমাই সবার বড়। লেখা-পড়া করছে ছোট পাঁচ ভাই-বোন।  পরিবারের উপর্জনের একমাত্র অবলম্বন থেকে বিদায় নিয়েছে।  এ অবস্থায় তসলিমার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে কিনা সে উত্তর জানা নেই কারো কাছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, জাকির আহমদের তিন ছেলে পাঁচ মেয়ে। এর মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে।  তসলিমার ছোটবোন হাফসা পড়ছে নবম শ্রেণিতে।  ছেলে রাশেদুল আলম, মোর্শেদুল আলমের পর ছোট মেয়ে কলি আক্তার পড়ছে পঞ্চম শ্রেণিতে।  ছোট ছেলে খোরশেদুল আলম পড়ছে দ্বিতীয় শ্রেণিতে।  এদিকে জাকির আহমদের মৃত্যুতে তার পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশীরা।

তসলিমাদের তিন ভাই পাঁচ বোনের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তার বাবা। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় বাবুর্চির কাজ করতেন তিনি।  এ অল্প উপার্জনেই চলতো সন্তানদের পড়ালেখা, এত বড় সংসার।  সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির আকস্মিক মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছে পুরো পরিবারটি।  ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া দেখা দিয়েছে শংকা।

মঙ্গলবার সকালে জাকির আহমদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের আহাজারি, বুকফাটা আর্তনাদ। কান্নায় ভেড়ে পড়ছে ছেলেমেয়েরা। তাদের সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন আত্মীয়, প্রতিবেশীরা।

সন্তানদের অনাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত মনোয়ারা বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার স্বামীতো কোন দোষ করেনি।  এলাকায় হামলা হলো।  আর উনি দেখতে গিয়ে লাশ হয়ে গেলেন।  আমার ছেলে-মেয়েদের কি হবে।’

এসময় সান্তনা দিতে আসা মো. ইলিয়াস বাদশা নামে এক প্রতিবেশী বাংলানিউজকে বলেন, গত পরশু রাতে প্রশাসনের লোকজন এসে গণ্ডামারা থেকে পাঁচজন পুরুষকে ধরে নিয়ে যায়। দুইজন নারীর ওপর অমানষিক নির্যাতন চালায়। এর প্রতিবাদে সোমবারের সমাবেশ আহবান করা হয়। কিন্তু সমাবেশস্থলে আহবানকারীরা আসার আগেই সেটা দখলে নেয় পুলিশ প্রশাসনের লোকজন।  উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুজ্জামান।  এসময় সমাবেশস্থলে যেতে চাইলে কোন সতর্কতা বা সংকেত না দিয়েই এলাকাবাসীর ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ।  এদের সঙ্গে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরাও যোগ দেয়।

তবে পুলিশ বলছে, উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার নির্দেশ পেয়ে আত্ম রক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। সংঘর্ষে জড়িত দুই পক্ষের গুলিতেই চারজন নিহত এবং ১১ পুলিশ সদস্য সহ ৩০জন আহত হয়েছে।

বাদশা বলেন, ‘হামলার খবর পেয়ে প্রতিবাদ জানাতে এসেছিল জাকির আহমেদ।  কিন্তু লাশ হয়ে ফিরতে হলো তাকে। এখন এ পরিবারটির কি হবে? যা ক্ষতি তা তো তাদের হয়েই গেল। তাদের কোন বড় ছেলে নেই যে হাল ধরবে।  এখন পথে নামা ছাড়া আর কোন উপায় থাকলো না তাদের। ’

পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ক্ষোভ ঝরে ইলিয়াসের কণ্ঠে, ‘এ ধরনের পুলিশি হামলা কেউ কামনা করে না।  এ হামলার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা পর্যন্ত আমাদের নেই।’

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» তারেক মনোয়ার একজন স্পষ্ট মিথ্যাবাদী

» কুয়েতে নতুন আইনে অবৈধ প্রবাসীদের কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে

» সোশ্যাল প্লাটফর্মে লন্ডনী মেয়েদের বেলেল্লাপনা,চাম্পাবাত সবার শীর্ষে

» ফারুকীর পদত্যাগের বিষয়টি সঠিক নয়

» পাকিস্তান থেকে সেই আলোচিত জাহাজে যা যা এল

» মিছিল করায় আট মাস ধরে সৌদি কারাগারে ৯৩ প্রবাসী, দুশ্চিন্তায় পরিবার

» কুয়েতে যুবলীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

» ক্ষমা না চাইলে নুরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়

» বাকু থেকে ফিরলেন ড. মুহাম্মাদ ইউনূস

» শুক্রবার আহত ও শহীদদের স্মরণে কর্মসূচি দিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

মৃত বাবার লাশ ঘরে রেখে তসলিমাকে যেতে হলো পরিক্ষার হলে

বাঁশখালীর গণ্ডামারা থেকে: ঘরে মা-বোনের কান্নার রোল, আত্মীয় স্বজনদের আহাজারি। আশপাশে প্রতিবেশীদের সান্তনা।  এ অবস্থায় পরীক্ষার হলে যাওয়ার প্রস্তুতি। এই অনুভূতি কেমন হতে পারে তা কেবল এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষার হলে যেতে প্রস্তুতি নেওয়া পরীক্ষার্থী ছাড়া আর কারও পক্ষে অনুধাবন করা অনম্ভব।

কিন্তু এ কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে, চোখে জল নিয়ে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে, কান্নার শব্দ পেছনে ফেলে, বাড়ির সামনে বাবার জন্য কবর খোঁড়ার মর্মান্তিক চিত্র দেখেই পরীক্ষার হলে যেতে হলো বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নের জাকির আহমদের মেয়ে তসলিমাকে।

সোমবার বাঁশখালীর গণ্ডমারায় এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে-বিপক্ষে দুই গ্রুপের উত্তেজনাকে ঘিরে পুলিশ-আনসার ও গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মারা যায় তসলিমার বাবা জাকির আহমেদ।

মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে থাকলেও মৃত্যুর সংবাদ সোমবার রাতেই পৌঁছেছে বাড়িতে। ফলে রাতে পড়তে বসা হয়নি।  সকালে পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগ মুহূর্ত

পর্যন্ত বাড়িতে বাবার মরদেহ না আসেনি।  বাবার মৃত্যুসংবাদ সঙ্গে নিয়েই পরীক্ষার হলে যেতে হলো তসলিমাকে।
পশ্চিম গণ্ডামারা রহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে এবছরের আলিম (এইচএসসি সমমান) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তসলিমা।  বিবাহিত দুই বোনের পরে পরিবারে তসলিমাই সবার বড়। লেখা-পড়া করছে ছোট পাঁচ ভাই-বোন।  পরিবারের উপর্জনের একমাত্র অবলম্বন থেকে বিদায় নিয়েছে।  এ অবস্থায় তসলিমার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে কিনা সে উত্তর জানা নেই কারো কাছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, জাকির আহমদের তিন ছেলে পাঁচ মেয়ে। এর মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে।  তসলিমার ছোটবোন হাফসা পড়ছে নবম শ্রেণিতে।  ছেলে রাশেদুল আলম, মোর্শেদুল আলমের পর ছোট মেয়ে কলি আক্তার পড়ছে পঞ্চম শ্রেণিতে।  ছোট ছেলে খোরশেদুল আলম পড়ছে দ্বিতীয় শ্রেণিতে।  এদিকে জাকির আহমদের মৃত্যুতে তার পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশীরা।

তসলিমাদের তিন ভাই পাঁচ বোনের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তার বাবা। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় বাবুর্চির কাজ করতেন তিনি।  এ অল্প উপার্জনেই চলতো সন্তানদের পড়ালেখা, এত বড় সংসার।  সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির আকস্মিক মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছে পুরো পরিবারটি।  ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া দেখা দিয়েছে শংকা।

মঙ্গলবার সকালে জাকির আহমদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের আহাজারি, বুকফাটা আর্তনাদ। কান্নায় ভেড়ে পড়ছে ছেলেমেয়েরা। তাদের সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন আত্মীয়, প্রতিবেশীরা।

সন্তানদের অনাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত মনোয়ারা বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার স্বামীতো কোন দোষ করেনি।  এলাকায় হামলা হলো।  আর উনি দেখতে গিয়ে লাশ হয়ে গেলেন।  আমার ছেলে-মেয়েদের কি হবে।’

এসময় সান্তনা দিতে আসা মো. ইলিয়াস বাদশা নামে এক প্রতিবেশী বাংলানিউজকে বলেন, গত পরশু রাতে প্রশাসনের লোকজন এসে গণ্ডামারা থেকে পাঁচজন পুরুষকে ধরে নিয়ে যায়। দুইজন নারীর ওপর অমানষিক নির্যাতন চালায়। এর প্রতিবাদে সোমবারের সমাবেশ আহবান করা হয়। কিন্তু সমাবেশস্থলে আহবানকারীরা আসার আগেই সেটা দখলে নেয় পুলিশ প্রশাসনের লোকজন।  উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুজ্জামান।  এসময় সমাবেশস্থলে যেতে চাইলে কোন সতর্কতা বা সংকেত না দিয়েই এলাকাবাসীর ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ।  এদের সঙ্গে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরাও যোগ দেয়।

তবে পুলিশ বলছে, উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার নির্দেশ পেয়ে আত্ম রক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। সংঘর্ষে জড়িত দুই পক্ষের গুলিতেই চারজন নিহত এবং ১১ পুলিশ সদস্য সহ ৩০জন আহত হয়েছে।

বাদশা বলেন, ‘হামলার খবর পেয়ে প্রতিবাদ জানাতে এসেছিল জাকির আহমেদ।  কিন্তু লাশ হয়ে ফিরতে হলো তাকে। এখন এ পরিবারটির কি হবে? যা ক্ষতি তা তো তাদের হয়েই গেল। তাদের কোন বড় ছেলে নেই যে হাল ধরবে।  এখন পথে নামা ছাড়া আর কোন উপায় থাকলো না তাদের। ’

পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ক্ষোভ ঝরে ইলিয়াসের কণ্ঠে, ‘এ ধরনের পুলিশি হামলা কেউ কামনা করে না।  এ হামলার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা পর্যন্ত আমাদের নেই।’

Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



Exchange Rate

Exchange Rate EUR: Thu, 21 Nov.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 /+8801316861577

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।